করোনাভাইরাস | |
---|---|
![]() |
|
![]() |
|
ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস | |
গ্রুপ: | ৪র্থ গ্রুপ ((+)ssRNA) |
বর্গ: | নিদুভাইরাস |
পরিবার: | করোনাভাইরদা |
উপপরিবার: | করোনাভাইরিনা |
গণ: |
|
আদর্শ প্রজাতি | |
করোনাভাইরাস |
করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণীকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ সর্দিকাশির ন্যায় মনে হয় (এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনোভাইরাস), কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি।
করোনাভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরিডি গোত্রের অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য।[১][২] তারা পজিটিভ সেন্স একক সূত্রবিশিষ্ট আবরণীবদ্ধ বা এনভেলপড ভাইরাস। তাদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ কিলো বেস-পেয়ার (kilo base-pair) এর মধ্যে হয়ে থাকে যা এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ।[৩] করোনাভাইরাস শব্দটি লাতিন ভাষার করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ “মুকুট”। কারণ দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির আবরণ থেকে গদা-আকৃতির প্রোটিনের কাঁটাগুলির কারণে এটিকে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মত দেখায়। ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রুপ প্রকাশ করে। ধারনা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করে।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘২০১৯-এনসিওভি’ নামকরণ করে। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অধীনস্থ অঞ্চলে ৫,৩২,১০০ (পাঁচ লক্ষ বত্রিশ হাজার একশত)-এরও বেশি ব্যক্তি করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ হাজার জনের বেশী ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে এবং ১ লাখ ২৪ হাজারের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে।
উহানে দেখা দেওয়া ভাইরাস প্রজাতিটি ‘এসএআরএস-সিওভি’ প্রজাতির সাথে ~৭০% জিনগত মিল পাওয়া যায়।[৭] অনেকেই অনুমান করছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ থেকে এসেছে যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধীতা করেন।[৮]
“করোনাভাইরাস” নামটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ করোনা থেকে যার অর্থ “মুকুট” বা “হার”। করোনা শব্দটি নিজে গ্রিক κορώνη korṓnē থেকে এসেছে যার অর্থ “মালা” বা “হার”। নামটি ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ভিরিয়নের (ভাইরাসের সংক্রামক আকার) বৈশিষ্ট্যমূলক উপস্থিতিকে নির্দেশ করে। ভিরিয়নের বিশাল কন্দাকৃতি পৃষ্ঠ অভিক্ষেপযুক্ত প্রান্ত রয়েছে যা মুকুটের স্মৃতি তৈরি করে। এর অঙ্গসংস্থান ভাইরাল স্পাইক পেপলোমিয়ার দ্বারা তৈরি হয়েছে যেগুলো মূলত ভাইরাসের পৃষ্ঠে অবস্থিত প্রোটিন।
করোনাভাইরাস বাল্বাস পৃষ্ঠের সাথে প্লিওমরফিক গোলাকার কণাসদৃশ।[৯] ভাইরাস কণার ব্যাস প্রায় ১২০ ন্যানোমিটার।[১০] ইলেক্ট্রন মাইক্রোগ্রাফগুলিতে ভাইরাসের আচ্ছাদনটি ইলেক্ট্রন গাঢ় শাঁসগুলির একটি পৃথক জোড়া হিসাবে উপস্থিত হয়।[১১]
সকল প্রজাতির করোনাভাইরাসে সাধারণত স্পাইক (এস), এনভেলপ (ই), মেমব্রেন (এম) এবং নিউক্লিওক্যাপসিড (এন) নামক চার ধরনের প্রোটিন দেখা যায়। ভাইরাল আচ্ছাদনে একটি লিপিড বাইলেয়ার থাকে যেখানে মেমব্রেন (এম), এনভেলপ (ই) এবং স্পাইক (এস) কাঠামোগত অ্যাংকর প্রোটিন থাকে।[১২] করোনাভাইরাসগুলির একটি উপসেট (বিশেষত বিটাকরোনাভাইরাস “সাবগ্রুপ এ”-এর সদস্যদের) হিমাগ্লুটিনিন অ্যাস্টেরেস নামে একটি সংক্ষিপ্ত স্পাইক-জাতীয় পৃষ্ঠ-প্রোটিন রয়েছে।[১৩]
ভাইরাস যখন এর আশ্রয়দাতা অঙ্গে প্রবেশ করে এবং সেই অঙ্গের আশ্রয়দাতা কোষের রিসিপ্টরে এর স্পাইক প্রোটিন সংযুক্ত করে তখনই সংক্রমণ শুরু হয়। সংযুক্তির পরে আশ্রয়দাতা কোষ থেকে নিঃসৃত প্রোটিয়েজ রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত স্পাইক, প্রোটিনকে বিচ্ছিন্ন ও সক্রিয় করে। আশ্রয়দাতা কোষে প্রোটিয়েজ প্রাপ্তিসাপেক্ষে, বিচ্ছিন্নকরণ ও সক্রিয়করণের দ্বারা নির্ধারিত হয় ভাইরাসটি এন্ডোসাইটোসিসের মাধ্যমে নাকি আশ্রয়দাতা কোষঝিল্লির সাথে ভাইরাল এনভেলপের সরাসরি একীভূত হওয়ার হওয়ার মাধ্যমে কোষে প্রবেশ করবে। []
আশ্রয়দাতা কোষে প্রবেশের সময় ভাইরাস কণাটি অনাবৃত অবস্থায় থাকে এবং এর জিনোম কোষের সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করে।[] করোনাভাইরাস আরএনএ জিনোমের একটি ৫’ মিথাইল ক্যাপ এবং একটি ৩’ পলিঅ্যাডেনিলেটেড লেজ রয়েছে যা আরএনএ কে রূপান্তরের জন্য আশ্রয়দাতা কোষের রাইবোজোমের সাথে যুক্ত রাখে।[]
করোনাভাইরাসে একটি পজিটিভ সেন্স, এক-সূত্রক আরএনএ জিনোম থাকে। করোনাভাইরাসগুলির জিনোমের আকার প্রায় ২৭ থেকে ৩৪ কিলোবেইজের মধ্যে থাকে।[১৪] আরএনএ ভাইরাসগুলির মধ্যে এটির জিনোমের আকার একটি বৃহত্তম। জিনোমে একটি 5′ মিথাইলিটেড ক্যাপ এবং 3′ পলি অ্যাডেনিলেটেড লেজ থাকে।[১৫]
একটি করোনাভাইরাসের জন্য জিনোম অর্গানাইজেশন হলো 5′-লিডার-UTR (Untranslated Region) -রেপ্লিকেজ/ ট্রান্সক্রিপটেজ-স্পাইক (S) – এনভেলপ (E) – মেমব্রেন (M) – নিউক্লিওক্যাপসিড (এন) – 3’UTR – পলি (A) লেজ। মুক্ত রিডিং ফ্রেম 1a এবং 1b জিনোমের প্রথম দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে এবং রেপ্লিকেজ/ট্রান্সক্রিপটেজ পলিপ্রোটিন এনকোড করে। রেপ্লিকেজ/ট্রান্সক্রিপটেজ পলিপ্রোটিন নিজে থেকেই ভেঙে গিয়ে অ-গাঠনিক প্রোটিন (Nonstructural Proteins, nsps) গঠন করে। [১৬]
পরবর্তী রিডিং ফ্রেমগুলি চারটি প্রধান গাঠনিক প্রোটিন: স্পাইক, এনভেলপ, মেমব্রেন এবং নিউক্লিওক্যাপসিডকে এনকোড করে।[১৭] এই রিডিং ফ্রেমগুলোর মধ্যে বিক্ষিপ্ত ফ্রেমগুলো হল আনুষঙ্গিক প্রোটিনগুলির জন্য রিডিং ফ্রেম। নির্দিষ্ট করোনভাইরাসের জন্য তার আনুষঙ্গিক প্রোটিনগুলির সংখ্যা এবং কার্যাবলী নির্দিষ্ট।[১৮]
হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট পানিকণার ফলে আক্রান্তর সংস্পর্শে অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে।[১৯] করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সাথে আক্রমণের শিকার হতে যাওয়ার কোষের হোস্ট কোষের গ্রাহকপ্রান্তের মিথস্ক্রিয়াই টিস্যু ট্রপিজম, সংক্রাম্যতা এবং প্রজাতির ব্যাপ্তি ইত্যাদির ব্যাপারে তথ্য দেয়।[২০][২১] উদাহরণস্বরূপ, সার্স করোনাভাইরাস অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরিত এনজাইম ২ (এসিই ২) মানবকোষে সংযুক্তির মাধ্যমে সংক্রামণ ঘটায়।[২২]
করোনাভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম Orthocoronavirinae (অর্থোকরোনাভিরিনি) বা Coronavirinae (করোনাভিরিন্যা) করোনাভাইরাস করোনাভিরিডি পরিবারের সদস্য।
সকল প্রকার করোনাভাইরাসের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ (মোস্ট রিসেন্ট কমন অ্যানসেস্টর বা এমআরসিএ) এর উৎপত্তি ঘটে আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।[২৩] আলফাকরোনাভাইরাসের এমআরসিএ ধারা ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, বেটাকরোনাভাইরাসের ধারা ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, গামাকরোনাভাইরাসের ধারা ২৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং ডেল্টাকরোনাভাইরাসের ধারা ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়েছে। বাদুর এবং পাখির মত উড়ন্ত উষ্ণরক্তধারী মেরুদণ্ডী প্রাণীরাই করোনাভাইরাস জিন-উৎসের বিবর্তন এবং ছড়িয়ে দেওয়ার আদর্শ বাহক (বাদুড়ের জন্য আলফা ও বেটা করোনাভাইরাস, পাখির জন্য গামা এবং ডেল্টাকরোনাভাইরাস)।[২৪]
বোভাইন করোনাভাইরাস এবং ক্যানাইন শ্বসনযন্ত্রের করোনাভাইরাসের শেষ পূর্বপুরুষ এসেছে (~ ১৯৫০) এর দিকে।[২৫] বোভাইন এবং মানব করোনাভাইরাস ওসি৪৩ ১৮৯০-এর দিকে ছড়ায়। বোভাইন করোনাভাইরাস ছড়ায় ইকুয়াইন করোনাভাইরাস প্রজাতি থেকে, ১৮ শতকের শেষদিকে।[২৬]
মানব করোনাভাইরাস ওসি৪৩-এর এমআরসিএ ১৯৫০-এর দিকে উৎপত্তি লাভ করে।[২৭]
মার্স-কোভি কিছু বাদুড়ের করোনাভাইরাস প্রজাতির সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও ধারণা করা হয় বেশকিছু শতাব্দী আগে এর উৎপত্তি ঘটে।[২৮] মানব করোনাভাইরাস এনএল৬৩ এবং একটি বাদুড়ের করোনাভাইরাসের এমআরসিএ ৫৬৩-৮২২ বছর আগে উৎপত্তি লাভ করে।[২৯]
১৯৮৬ সালে বাদুড় করোনাভাইরাস এবং সার্স-কোভির সাথে সম্পর্কযুক্ত ভাইরাস উৎপত্তি লাভ করে।[৩০] বাদুড়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত সার্স ভাইরাসের বিবর্তনের একটু যাত্রাপথ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গবেষকেরা মনে করেন, করোনাভাইরাস দীর্ঘসময় ধরে বাদুড়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়েছে এবং সার্স-কোভির উত্তরসূরীরা প্রথমে হিপোসিডারিডি গণের প্রজাতির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এরপরে তা রাইনোলফিডির প্রজাতির মধ্যে, পরবর্তীতে ভামের মধ্যে এটি ছড়ায় এবং সর্বশেষে ছড়ায় মানুষের মধ্যে।[৩১][৩২]
আলপাকা করোনাভাইরাস এবং মানব করোনাভাইরাস ২২৯ই ১৯৬০-এর দিকে উৎপত্তি লাভ করে।[৩৩]
ক্ষতির সম্ভাবনার দিক থেকে করোনাভাইরাস বেশ বৈচিত্র্যময়। কিছু প্রকরণ আক্রান্তের ৩০%-এরও বেশিকে মেরে ফেলে (যেমন মার্স-কোভি), কিছু প্রকরণ মোটামুটি নিরীহ, যেমন সাধারণ ঠাণ্ডা।[৩৪] করোনাভাইরাস ঠাণ্ডার পাশাপাশি বড় ধরণের কিছু উপসর্গ সৃষ্টি করে, যেমন জ্বর, ফুলে যাওয়া অ্যাডিনয়েডের ফলে গলা ব্যথা। এগুলো সাধারণত শীতকালে এবং বসন্ত ঋতুর শুরুর দিকে হয়।[৩৫] করোনাভাইরাস নিউমোনিয়া ঘটাতে পারে (সরাসরিভাবে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া অথবা পরোক্ষভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া) এবং ব্রঙ্কাইটিসের (সরাসরিভাবে ভাইরাসজনিত ব্রঙ্কাইটিস অথবা পরোক্ষভাবে ব্যাকটেরিয়াজনিত ব্রঙ্কাইটিস) মাধ্যমে।[৩৬] ২০০৩ সালে সার্স-কোভি ছড়ানোর পর থেকে করোনাভাইরাস পরিচিতি পায়। এই ভাইরাস একইসাথে সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এবং উর্ধ্ব এবং নিম্ন শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়।[৩৬]
মানব করোনাভাইরাসের নিম্নলিখিত প্রকরণ আবিষ্কৃত হয়েছে:
এবং নিচের তিনটি, সাধারণত মারাত্মক হয়ে থাকে:
করোনাভাইরাস এইচকোভি-২২৯ই, -এনএল৬৩, -ওসি৪৩ এবং -এইচকেইউআই মানুষের মধ্যে ক্রমাগত ছড়ায় এবং বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়।
Recently we are helping some homeless people providing the flood afected people .Day long training has been conducted by Upoazila livestock officer organized by JUS . Where approximately 100 participants were present from those 100 families who have received goods.
Facebook Comments